এইচআইভি-এইডস

এইডস হচ্ছে A = অ্যাকোয়ার্ড (অর্জিত) I = ইমিউন (রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা) D = ডেফিশিয়েন্সি (হ্রাস) S = সিনড্রোম (অবস্থা) অর্থাৎ বিশেষ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অবস্থাকে এইডস বলে।
এইচআইভি’র কারণে এইডস হয়। এইডস-এর ভাইরাস বেশির ভাগ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে যৌনমিলন ছাড়া অন্যভাবেও যেমন- জীবাণুমুক্ত না করা সুচ ব্যবহার, শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, সংক্রমিত রক্ত শরীরে গ্রহণ ও সংক্রমিত মা থেকে শিশুর মধ্যে এইডস-এর ভাইরাস ছড়াতে পারে। আজ পর্যন্ত এইডস-এর কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। উন্নত দেশে এর চিকিৎসা বের হয়েছে, তবে এ চিকিৎসা এইডস হবার সময়কে বিলম্বিত করে মাত্র। তা ছাড়া এ চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এইডস হলে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি। তাই এই শারীরিক অবস্থাকে দুরারোগ্য ব্যাধি বলে মনে করা হয়। আমরা জানি রোগের জীবাণু শরীরে ঢুকলে সব সময় আমাদের অসুখ হয় না। আমাদের শরীরে একটি ক্ষমতা বা শক্তি আছে যা রোগজীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে তাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে। একে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায় তখন যেকোনো রোগ আমাদের শরীরকে আক্রমণ করতে পারে। তাই কেউ এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে শেষ পর্যায়ে অন্য যেকোনো অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করে ধীরে ধীরে তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। কারণ এই ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়।
এ রোগের জীবাণুর নাম কী? H = হিউম্যান (মানুষের) I = ইমিউনো-ডেফিশিয়েন্সি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস) V = ভাইরাস (জীবাণু) আমরা আগেই জেনেছি, যে জীবাণু দিয়ে এইডস হয় তার নাম এইচআইভি। এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে থাকে। এভাবে নষ্ট হতে হতে এক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তখন বিভিন্ন রোগ আমাদের শরীরকে আক্রমণ করে, চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয় না। বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দেবার পর আমরা এই শারীরিক অবস্থাকে এইডস বলি।
শরীরে এইচআইভি ঢোকার পর সাথে সাথে কোনো লক্ষণ থাকে না বা কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। তবে শরীরে প্রবেশের পরপরই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে বিভিন্নভাবে (১২ ও ২০ পাতায় বর্ণিত) আরেক জনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। বাইরে থেকে কারো শরীরে এইচআইভি আছে কি না বোঝা যায় না। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে এই ভাইরাস আছে কিনা জানা যায়। এইচআইভি শরীরে ঢোকার পর থেকে কত বছর পর এইডস হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটা ৫ বছর হতে পারে আবার ১৫ বছরও হতে পারে। বিভিন্ন অবস্থার উপর (৩২ পাতায় বর্ণিত) তা নির্ভর করে। তবে একবার এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করলে এক সময় এইডস দেখা দেবেই, এর হাত থেকে রক্ষা নেই।
এইচআইভি সংক্রমণের কারণে এইডস হয়। এইডস-এর প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনমিলনের মাধ্যমে এইডস ছড়ায়। তবে এইচআইভি বিভিন্নভাবে একজনের শরীর থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়াতে পারে। যেমন:  যার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে তার সাথে যেকোনো ধরনের যৌনমিলন করলে, এইচআইভি ঐ ব্যক্তির শরীর থেকে তার যৌনসঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে যায়  যার শরীরে এইচআইভি রয়েছে তার রক্ত বা যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য কারো শরীরে দেয়া হলে  এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সুচ, সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে অন্য কারো শরীরে ইনজেকশন দেয়া হলে  যে সব গর্ভবতী মায়ের শরীরে এইচআইভি রয়েছে, সেই মায়ের কাছ থেকে ক) গর্ভাবস্থায় খ) প্রসবের সময় বা গ) বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারো শরীরে এইচআইভি আছে কিনা, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। বাইরে থেকে তাকে দেখতে যেকোনো সুস্থ এবং স্বাভাবিক মানুষের মতো লাগে। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে এই ভাইরাস আছে কিনা জানা যায়। তাই দেখতে সুস্থ, স্বাস্থ্যবান মানুষ মনে হলেও তার মধ্যে এইচআইভি থাকতে পারে। তার সাথে কনডম ছাড়া যৌনমিলন করলে এই ভাইরাস যৌনসঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যাপারটি এরকম যে, যার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে সে নিজেও বুঝতে পারে না। কেননা তার তখন হয়তো কোনো সমস্যা বা অসুস্থতা নেই। যৌনমিলনের সময় তার কাছ থেকে তার যৌনসঙ্গীর শরীরে যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তাও সে জানতে পারছে না। আবার তার যৌনসঙ্গীর সাথে অন্য কারোর যৌনমিলন হলে তার সঙ্গীর কাছ থেকে আবারও অন্য জনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবেই এইডসের ভাইরাস মহামারী আকারে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু যৌনমিলন নয়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সুচ, সিরিঞ্জ দিয়ে অন্য কাউকে ইনজেকশন দিলে তা বা তার রক্ত অন্য কারোর শরীরে দেয়া হলে এই ভাইরাস অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু কেউ তা বুঝতে পারে না।
এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। বেশির ভাগ সময়ে এইডস-এর জীবাণু যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও এইচআইভি-তে আক্রান্ত কারো ব্যবহার করা সুচ, সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে অন্য কেউ ব্যবহার করলে, তার রক্ত অন্য কারো শরীরে দেওয়া হলে, এইচআইভি-সংক্রমিত গর্ভবতী মা থেকে তার শিশুর মধ্যে গর্ভাবস্থায়, জন্মের সময় বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তার মধ্যে এইচআইভি ছড়াতে পারে। মশা বা পোকামাকড় কামড় দিলে এইচআইভি ছড়াবে না। আমাদের অনেকের মধ্যে এইচআইভি-এইডস নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। দেখা যায়, কারো এইডস হয়েছে জানলে আশপাশের লোকজন ভয় পেয়ে যায়। মনে করে এই রোগীর কাছ থেকে তাদেরও এই ভয়ানক রোগ হয়ে যাবে। অনেক সময় এই রোগীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। তাই কীভাবে এইচআইভি ছড়ায় ও ছড়ায় না এ সম্বন্ধে ভালোভাবে জানলে তোমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে, মিথ্যা ভয় পাবে না এবং তাদের প্রতি সহজ আচরণ করবে।
এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই এবং যক্ষ্মা, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের মতো শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে এই রোগ হয় না। এইচআইভি শরীরে ঢোকার পর আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে থাকে। এই ক্ষমতা যখন সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায় তখন বিভিন্ন রোগের জীবাণু সহজেই শরীরকে আক্রমণ করে। দেখা যায় ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া রোগের জীবাণু ও কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার শরীরকে বেশি আক্রমণ করে। তবে অন্য যেকোনো রোগও হতে পারে। এছাড়া হঠাৎ করে শরীরের ওজন খুব কমে যেতে পারে ও শরীর খুব দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে কোন লক্ষণ দেখা দেবে তা আগে ঠিক করে বলা যায় না। কারো শরীরে এইচআইভি আছে কিনা তা শুধু রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায়, রক্ত পরীক্ষায় যদি এইচআইভি পাওয়া যায় তাহলে এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
উন্নত দেশে ইতোমধ্যে এইডস-এর কিছু চিকিৎসা বা ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশেও এর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে এই চিকিৎসা খুবই দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। এইডস-এর বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তাররা সে রোগের/সমস্যার ওষুধ দিয়ে কিছুটা কষ্ট কমানোর চেষ্টা করেন। এতে রোগীর জীবন কোনো কোনো সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও নিয়মিত ঔষধের অভাবে রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কষ্ট পেতে পেতে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়।
এইডস হওয়া স্বামী-স্ত্রীর বেশি বা কম যৌনসম্পর্কের উপর নির্ভর করে না। এ রোগ নির্ভর করে দু’জনের মধ্যে কোনো একজনের শরীরে এইচআইভি আছে কিনা তার উপর। স্বামী-স্ত্রী কারোর মধ্যে যদি এইচআইভি না থাকে, তাহলে শুধু দু’জনের মধ্যে যৌনসম্পর্ক হলে এইডস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজনেরও যদি আগে বা বর্তমানে অন্য কারোর সাথে যৌনসম্পর্ক থাকে এবং যাদের সাথে যৌনসম্পর্ক হয়েছে তাদের শরীরে যদি এইডস-এর ভাইরাস থাকে তাহলে এইডস হতে পারে।
বাবার যদি এইডস রোগ থাকে তাহলে যৌনমিলনের মাধ্যমে মায়ের শরীরে এইচআইভি-এইডসের জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে। যার ফলে যে বাচ্চা গর্ভে আসে, সে বাচ্চারও সংক্রমিত মায়ের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
কনডম ব্যবহার করে যৌনমিলন করলে যদি কনডম লিক হয়ে যায় সেক্ষেত্রে এইচআইভি-এইডস হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ বীর্য ও যোনিরসে এইচআইভি থাকে। এইচআইভি-এইডস আছে এমন কারো সাথে যৌনমিলনের সময় কনডম লিক হলে বা ছিঁড়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য বা যোনিরস তার যৌনসঙ্গীর যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে আসে। এতে এই রোগের জীবাণু রোগীর শরীর থেকে তার সঙ্গীর মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে।
এইডস-এর কোনো প্রতিষেধক নেই। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। এইডস-এর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, প্রত্যেকদিন ওষুধ খাওয়া ও সারাজীবন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি অসুবিধার জন্য এইডস-এর ব্যবস্থাপনা বেশ জটিল। এইডস একবার হলে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি। তাই এই রোগকে ঘাতক ব্যাধি বলা হয়। এইচআইভি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। কিন্তু যক্ষ্মা, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায় না। এ ছাড়া যক্ষ্মা, কলেরা ও টাইফয়েড রোগ চিকিৎসা করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। তাই এগুলোকে ঘাতক ব্যাধি বলা যায় না।
একটি মেয়ের সাথে একাধিক পুরুষ অথবা একটি পুরুষের সাথে অনেক মেয়ে যদি সঙ্গম বা যৌনমিলন করে এবং এদের মধ্যে যেকোনো একজনের শরীরে যদি এইচআইভি থাকে, তাহলে সবার মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে। যেহেতু বাইরে থেকে দেখতে সবাই সুস্থ, তাই কারো শরীরে এই রোগের ভাইরাস আছে কিনা বলা মুশকিল। এইচআইভি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে নিরাপদ যৌন অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। যেমন- যৌনসম্পর্কে একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করা ইত্যাদি।
হ্যাঁ, কথাটি ঠিক। এইচআইভিসহ বেশ কিছু রোগের জীবাণু রক্তের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায়। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুচ ও সিরিঞ্জ একজন সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে সেই সুস্থ ব্যক্তিটিও এইচআইভি আক্রান্ত হতে পারে। ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণকারীরা সাধারণত একসাথে অনেকে বসে একটি সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করে নেশা করে। যার কারণে এদের একজনের মধ্যে এইচআইভি থাকলে তা এই সুচ ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এইচআইভি ছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণকারীদের মধ্যে একই উপায়ে বিভিন্ন রোগ যেমন- হেপাটাইটিস-বি’র সংক্রমণ ঘটতে পারে। আসলে যেকোনো উপায়ে এইচআইভি’র জীবাণুযুক্ত রক্ত একজন সুস্থ মানুষের শরীরে গেলেই সেই সুস্থ লোকটি এইচআইভি-তে আক্রান্ত হয়ে যাবে।
 প্রতিবার যৌনমিলনের সময় সঠিক নিয়মে কনডম ব্যবহার করতে হবে  এইচআইভি সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে শুধু বিশ্বস্ত একজনের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে। এটা উভয় সঙ্গীর জন্য প্রযোজ্য  একবার মাত্র ব্যবহার করা যায় এমন সুচ ও সিরিঞ্জ (ডিসপোজেবল সুচ ও সিরিঞ্জ) দিয়ে ইনজেকশন নিতে হবে  রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে রক্ত নেওয়ার আগে এতে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে রক্ত নিতে হবে  ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
বিয়ে সারাজীবনের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। সামাজিক বা আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পাত্র পেলেও পাত্র সম্বন্ধে ঠিকমতো খোঁজখবর নিতে হবে এবং এইচআইভি-এইডস এর ঝুঁকি এড়াতে এক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী ও পিতামাতাকে সতর্ক হতে হবে। বিয়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মতো পাত্র বা পাত্রী কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে (যেমন- সুই বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, বিবাহপূর্ব বা যৌনকর্মীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক) অভ্যস্ত কিনা। বিশেষ করে যেসব পাত্র-পাত্রী পরিবার থেকে দূরে একা বসবাস করে তাদের সম্পর্কে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে হবে। এক্ষেত্রে মেডিকেল চেক-আপ বা ডাক্তারি পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। তবে কারো শরীরে এইচআইভি আছে কিনা, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। বাইরে থেকে তাকে দেখতে যেকোনো সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মতো লাগে। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে এই ভাইরাস আছে কিনা জানা যায়। রক্ত পরীক্ষায় যদি এইচআইভি পাওয়া যায় তাহলে সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। যার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে অনেক সময় সে নিজেও বুঝতে পারে না, কেননা তার তখন হয়তো কোনো সমস্যা থাকে না।
 একসাথে এক ঘরে বসবাস করলে  একসাথে খাওয়া-দাওয়া বা খেলাধুলা করলে  একই বিছানায় ঘুমালে  একই থালা-বাসনে খাবার খেলে  একই স্কুলে পড়াশুনা করলে  মশা বা কোনো পোকামাকড়ের কামড় খেলে  শারীরিক স্পর্শ যেমন: হাত মেলানো, কোলাকুলি বা সামাজিক চুম্বন করলে (তবে একজনের মুখের থুথু বা লালা অন্যের মুখে/শরীরে না লাগাই ভালো)  হাঁচি, কাশি, থুথু বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে  একই টয়লেট বা পায়খানা বা বাথরুম ব্যবহার করলে  একসাথে পুকুরে সাঁতার কাটলে
কারো শরীরে এইচআইভি’র ভাইরাস পাওয়া গেলে তা সহজভাবে মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিভিন্নভাবে এইচআইভি যে কারো শরীরে ঢুকতে পারে। এইচআইভি যাতে সংক্রমিত হতে না পারে সে জন্য আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন এবং যারা এই বিষয়ে জানেন না তাদের সচেতন করা আমাদের দায়িত্ব। নিজের আত্মীয়স্বজন, পরিচিত বা অপরিচিত কারো শরীরে এইচআইভি পাওয়া গেলে বা এইডস হয়ে গেলে তাকে ভয় পাওয়া, ঘৃণা করা বা দূরে সরিয়ে রাখা উচিত নয়। তাকে সমবেদনা জানানো, যত্ন করা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তোমরা জানো কীভাবে এইচআইভি ছড়ায় ও কীভাবে ছড়ায় না। তাই নিজেকে রক্ষা করবে ও অযথা ভয় না পেয়ে রোগীর প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
যদি দুর্ভাগ্যক্রমে কারো শরীরে এই রোগের ভাইরাস পাওয়া যায় তাহলে চিৎকার/কান্নাকাটি বা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে যতোটা সম্ভব সহজভাবে এর মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ। এ সময়ে কীভাবে ভালো থাকা যায়, বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে কীভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তার চেষ্টা করা উচিত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে বিভিন্ন রোগ সহজেই আক্রমণ করে কাবু করে ফেলবে। তাই এইচআইভি শরীরে থাকলেও এইডস দেরিতে হওয়ার জন্য এবং অন্যকে রক্ষা করার জন্য  ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে  পুষ্টিকর ও ভিটামিন আছে এমন খাবার খেতে হবে  নিজের টুথব্রাশ ও রেজার, ব্লেড, নরুন, ক্ষুর ব্যবহার করতে হবে (অন্য কেউ যেন একই জিনিস ব্যবহার করতে না পারে)  স্বাভাবিক কাজকর্ম, বিশ্রাম ও প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে  যৌনমিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে  মেয়েদের ক্ষেত্রে বাচ্চা নিতে চাইলে বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেওয়া উচিত  এ ছাড়া মানসিকভাবে হাসিখুশি থাকা, দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা, স্বাভাবিক জীবনযাপন করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে শরীরে এইচআইভি থাকলেও দেরিতে এইডস দেখা দেবে।  এই ভাইরাস হলে নিজের প্রতি যতœশীল থাকতে হবে এবং যাতে অন্যের শরীরে ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।