প্রসব জনিত ফিস্টুলা , জরায়ু এবং স্তন ক্যান্সার

বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্থ প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা যোনিপথে বেশি প্রসব প্রসবজনিত ফিস্তুলার মূল কারণ। বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্থ প্রসবের কারণে বাচ্চার মাথা যদি প্রসব পথে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে তাহলে মুত্রনালী, প্রসাবের পথ এবং পায়ুপথের নরম অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পচন ধরে, ফলস্বরূপ ছিদ্র হয়ে প্রসব জনিত ফিস্টুলা সৃষ্টি হয় এবং অনবরত প্রসাব বা পায়খানা ঝরতে থাকে।

প্রসব জনিত ফিস্টুলা প্রতিরোধের উপায়

  • ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে নয় এবং ২০ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণ নয়।
  • ঘন ঘন গর্ভধারণ নয়।
  • নিয়মিত প্রসব পুর্ব স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
  • বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্থ প্রসব হলে গর্ভবতীকে দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
  • দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবাদানকারী দিয়ে নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা করা।

চিকিৎসায় প্রসব জনিত ফিস্টুলা ভালো হয়

প্রসব জনিত ফিস্টুলা হলে তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এর চিকিৎসা রয়েছে। প্রসব জনিত ফিস্টুলা রোগীকে হাসপাতালে পরামর্শ ও চিকিৎসার জন্য যেতে হবে।

জরায়ুর মুখের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার

বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই জরায়ুর মুখের ক্যান্সার। এ ছাড়া অন্যতম দ্বিতীয় ক্যান্সার হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। কিন্তু এ দুটি ক্যান্সার পরীক্ষা - নিরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই শনাক্ত করা যায় এবং এ দুটি ক্যান্সারজনিত কারণে মহিলাদের মৃত্যু রোধ করা যায়। ৩০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সি মহিলাদের নিয়মিত হাসপাতালে অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরায়ু মুখ এবং স্তন পরীক্ষা করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। ফলে নিয়মিত পরীক্ষা করে প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা গেলে এ রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে পদ্ধতিতে জরায়ুর-মুখের ক্যান্সার শনাক্ত কারা হয় তাকে VIA ( Visual Inspection of Cervix with Asitic Acid), সহজ ভাষায় ভায়া বলে। এ পদ্ধতিতে জরায়ু মুখ পরীক্ষা করলে ক্যান্সার পূর্বাবস্থা সাদা রং ধারণ করে এবং রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।

স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে CBC (clinical breast examination) পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থাৎ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা হাত দিয়ে স্তনে কোনো চাকা বা অন্য কোনো অসুবিধা আছে কিনা তা পরীক্ষা করেন। এ ছাড়া মহিলারা বাড়িতে নিজে নিজে কিভাবে হাত দিয়ে স্তন পরীক্ষা করে চাকা আছে কিনা নির্ণয় করবেন তা SBE (self breast examination) শিখিয়ে দেয়া হয়। VIA পরীক্ষা করে একজন মহিলাকে VIA পজিটিভ বা VIA নেগেটিভ এবং SBE পরীক্ষা করে CBE পজিটিভ বা নেগেটিভ চিহ্নিত করা হয়। দুটি ক্ষেত্রেই নেগেটিভ মহিলাদের ৩ বছর পরপর স্বাস্থকেদ্রে পরীক্ষার জন্য যেতে হবে। তবে, VIA পজিটিভ এবং CBE পজিটিভ মহিলাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হবে।

জরায়ুর মুখের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ

অল্প বয়সে বিয়ে, ঘনঘন সন্তান, নিজের বা স্বামীর একাধিক বিয়ে, এছাড়া যে সকল মহিলা নিরাপদ যৌন আচরণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন, তাদের মধ্যে জরায়ুর মুখের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। স্তন ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস, সন্তানকে বকের দুধ না খাওয়ানো, অতিরিক্ত মোটা হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ৩০ বছর বয়স ঊর্ধ্ব সকল মহিলাকে নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরায়ুর মুখের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

জরায়ুর মুখ ক্যান্সারের লক্ষণ

  • মাসিকের রাস্তা দিয়ে অনিয়মিত রক্তক্ষরণ।
  • মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবার মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া।
  • স্বামী সহবাসে রক্তক্ষরণ।
  • মাসিকের রাস্তা দিয়ে সাদা ঘন অথবা ময়লা বাদামি রং এর গন্ধযুক্ত স্রাব।
  • তলপেটে ব্যথা।

স্তন ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ

  • স্তনে চাকা।
  • স্তনে ব্যথা।
  • স্তনে ক্ষত বা ঘা।
  • স্তনের বোঁটা দিয়ে পুঁজ বা রক্তাক্ত তরল নিঃসরণ।

সূত্র পরিবার পরিকল্পনা ম্যানুয়েল, এন জেন্ডার হেলথ ২০১২