গর্ভধারণ

একটি মেয়ের মাসিক শুরু হয় ১২-১৩ বছর বয়সে এবং মাসিক শুরু হবার পর থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। এই ডিম্বাণু সাধারণত দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের থলি থেকে ডিম্ববাহী নালীতে আসে। এই সময়ে যদি যৌনমিলন হয়, তাহলে পুরুষের শুক্রাণু যোনিপথ দিয়ে ডিম্ববাহী নালীতে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হবার ফলে ভ্রুণ তৈরি হয়। একে গর্ভধারণ বলে। এই ভ্রুণ কয়েক দিন পর জরায়ুতে এসে পৌঁছে এবং সেখানে বড় হয়ে শিশুতে পরিণত হয়। এ সময় শিশুটি একটি গর্ভ-ফুলের (ফুল) মাধ্যমে মায়ের জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে এবং গর্ভ-ফুলের মধ্য দিয়ে শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পায়। সাধারণত ৯ মাস ৭ দিন এভাবে মায়ের জরায়ুতে কাটানোর পর মায়ের প্রসব ব্যথা ওঠে এবং শিশু যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। একেই প্রসব বা ডেলিভারি বলে। কখনো কখনো সমস্যা থাকলে পেট কেটে বা অপারেশন করে বাচ্চা বের করা হয়।
একবার মাত্র যৌনমিলন হলেও গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। যৌনমিলনের সময় যদি একটি ছেলের শুক্রাণু একটি মেয়ের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় তাহলে মেয়েটি গর্ভবতী হতে পারে। শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলন না ঘটলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। তাই কতবার যৌনমিলন হলো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলনটাই গর্ভধারণের প্রধান কারণ।
শুধু বিয়ের পরে স্বামীর সাথে যৌনমিলনে একটি মেয়ে গর্ভবতী হয় না, বিয়ের আগে যৌনমিলন হলেও পেটে বাচ্চা আসতে পারে। কারণ যৌনমিলনের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু যখন মেয়েদের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়, তখন একটি মেয়ের পেটে বাচ্চা আসে।
গর্ভধারণের পর মেয়েদের প্রথম যে লক্ষণ দেখা যায় তা হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। যদি শারীরিক মিলন হওয়ার পর মাসিক হওয়ার নির্দিষ্ট দিন পার হয়ে যায় এবং মাসিক শুরু না হয় তাহলে ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকের এ সময় বমি বমি ভাব লাগা ও মাথা ঘোরানো, খাওয়ায় অরুচির মতো লক্ষণগুলোও দেখা যেতে পারে। ইদানিং বাজারে গর্ভধারণ পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন্ নামে ‘প্রেগনেন্সি টেস্ট স্ট্রিপ’ বা ‘গর্ভধারণ পরীক্ষার স্ট্রিপ’ পাওয়া যায়। এই ‘প্রেগনেন্সি টেস্ট স্ট্রিপ’-এর মাধ্যমে খুব সহজে ঘরে বসে নিজেই নিজের প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা জানতে পারে।
সাধারণত মাসিক শুরু না হলে বাচ্চা হয় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মাসিক না হলেও বাচ্চা হতে পারে। স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়, তারপর মাসিক হয়। তাই জীবনে প্রথম মাসিক হবার আগেই প্রথম পরিপক্ক ডিম্বাণু যদি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় তাহলে দেখা যায়, মেয়েটির মাসিক শুরু হয়নি অথচ গর্ভবতী হয়ে গেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রথম মাসিক হবার আগে যৌনমিলন হলে পেটে বাচ্চা আসতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চা প্রসবের পরে বেশ কয়েকমাস মাসিক বন্ধ থাকতে পারে এবং এ সময়ে মাসিক বন্ধ থাকলেও একটি মেয়ে আবার গর্ভবতী হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকে মনে করে বাচ্চা হবার পর মাসিক বন্ধ থাকলে পেটে বাচ্চা আসে না। আবার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালেও বাচ্চা হবার ভয় থাকে না। কিন্তু বুকের দুধ খাওয়ালে বা মাসিক বন্ধ থাকলেও পেটে বাচ্চা আসতে পারে। তাই প্রসবের ৬ সপ্তাহ পর থেকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
সাধারণত দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ডিম্ববাহী নালীতে আসে। তাই মাসিকের সময় যৌনমিলন হলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসিকের সময়ও ডিম্বাণু ডিম্ববাহী নালীতে আসতে পারে, তাই এ সময় যৌনমিলন হলে পেটে বাচ্চা আসতে পারে। তা ছাড়া মাসিকের সময় যৌনমিলন হলে জরায়ুতে সংক্রমণ হবার ভয় থাকে।
অনেক কারণে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। তবে মাসিক বন্ধ হবার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে গর্ভবতী হওয়া। তাই যৌনমিলনের পর মাসিক বন্ধ থাকলে যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভবতী কিনা নিশ্চিত হতে হবে। তবে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, জায়গা পরিবর্তনের কারণেও মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। এ ছাড়া কোনো অসুখের কারণে কিংবা কোনো ওষুধ বা কোনো কোনো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেক সময় মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। তবে, কত দিন বন্ধ থাকবে তা সঠিকভাবে বলা যায় না, বিভিন্ন অবস্থার ওপর তা নির্ভর করে। এ ছাড়া বেশির ভাগ মহিলার বাচ্চা হওয়ার পরে কয়েক মাস পর্যন্ত মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। এটি স্বাভাবিক এবং কয়েক মাস পর আবার মাসিক শুরু হয়। তবে কখনো কখনো মাসিক বন্ধ থাকলেও পেটে বাচ্চা আসতে পারে।
গর্ভধারণ হচ্ছে শরীরের একটি বিশেষ পরিবর্তন। গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাস কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণ যেমন- বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খাওয়ায় অরুচি, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। কয়েক মাস পরেই এগুলো ঠিক হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো এ লক্ষণগুলো খুব বেড়ে যায় এবং পুরো ৯ মাসই লক্ষণগুলো থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। মাসিক বন্ধ হওয়া ছাড়াও গর্ভবতী হওয়ার আরো কিছু লক্ষণ আছে। যেমন-  বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া  মাথা ঘোরা  বার বার প্রস্র্রাব হওয়া  স্তন বড় ও ভারি হওয়া ইত্যাদি
বাচ্চা মেয়ে হবে না ছেলে হবে তা মায়ের ওপর নির্ভর করে না এবং এতে মায়ের কোনো হাত নেই। মায়ের গর্ভে যে শিশুটি আসবে তার লিঙ্গ নির্ভর করে বাবার শুক্রাণুর ওপর। প্রকৃতিগতভাবে, নারীরা এক্স-এক্স (XX) ক্রোমোজম এবং পুরুষরা এক্স-ওয়াই (XY) ক্রোমোজম ধারণ করে থাকে। পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণু মিলনের সময় পুরুষের এক্স (X) অথবা ওয়াই (Y) ক্রোমোজমের যে কোনোটি আসতে পারে। এক্ষেত্রে পুরুষের এক্স (X) ক্রোমোজম যদি নারীর এক্স (X) ক্রোমোজমের সাথে যুক্ত হয় তাহলে ঐ সন্তান মেয়ে হয়ে থাকে অন্যদিকে, এক্স (X) না হয়ে পুরুষের ওয়াই (Y) ক্রোমোজম যদি নারীর এক্স (X) ক্রোমোজমের সাথে যুক্ত হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ সন্তান ছেলে হয়। তাই মেয়ে বাচ্চা হলে মাকে দোষ দেয়ার কোনো কারণ বা যুক্তি নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার।