পরিবার পরিকল্পনা

একটি মেয়ের ২০ বছর বয়সের পর বাচ্চা নেয়া মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যদি এ বয়সের আগে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হয়, তবে তার নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। কারণ এ সময়ে মেয়েদের কোমরের হাড় পুরোপুরি বাড়ে না, তাই গর্ভবতী হলে পেটের বাচ্চা বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট জায়গা পায় না। ফলে কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়, আর এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকে। অল্প বয়সে প্রসব বা ডেলিভারির রাস্তাটি ছোট থাকে তাই বাচ্চা হওয়ার সময় অতিরিক্ত চাপের ফলে এ রাস্তা ছিঁড়ে যায়, অনেক সময় বাচ্চা বের হতেও অনেক কষ্ট হয়। এ বয়সে মা হলে মা ও সন্তানের মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এ ছাড়া অল্প বয়সে ছেলেরা ও মেয়েরা মানসিকভাবে পুরোপুরি বড় হয় না। বাচ্চা যত্ন ও লালন-পালন করতে হয়, কীভাবে বাচ্চা বড় করে তুলতে হয় তা অল্পবয়সি মেয়েরা তেমন বুঝতে পারে না। আর অল্পবয়সি ছেলেদের বাবা হবার মতো দায়িত্ববোধ ও সামর্থ্য তৈরি হয় না। এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো যে, প্রথম যৌনমিলনেও পেটে বাচ্চা আসতে পারে। বেশির ভাগ স্বামী-স্ত্রী বিয়ের শুরুতেই বাচ্চা নেয়ার কথা ভাবে না। প্রথমে তারা পরস্পরকে জানতে চায়, বুঝতে চায়, কিছুটা প্রস্তুতি নিতে চায়। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে না জানার কারণে এবং কোনো পদ্ধতি ব্যবহার না করার কারণে অনেক দম্পতির ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিয়ের পরপরই গর্ভধারণ করে। তাই, শুরুতেই বাচ্চা নিতে না চাইলে প্রথম রাত থেকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে, প্রথম রাত থেকেই কনডম ব্যবহার করতে হবে এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে পরামর্শ করে যেকোনো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রযোজন। কনডম নবদম্পতিদের জন্য একটি উপযুক্ত পদ্ধতি।
প্রত্যেক ছেলে-মেয়েরই বিয়ের আগে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা উচিত। পরিকল্পিত পরিবার গঠন সুখী জীবনের চাবিকাঠি। এতে লজ্জার কিছু নেই। কারণ এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে কখন বাচ্চা নেয়া উচিত, সে ব্যাপারে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। জীবনকে সুখী ও সুন্দর করার লক্ষ্যে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠন করাই হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা। সন্তান নেবার আগে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে চিন্তা করবে তারা কখন সন্তান নিতে চায় এবং সন্তান নেবার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি তাদের আছে কিনা। উল্লেখ্য, ২০ বছর বয়সের আগে মেয়েদের শরীরে মা হওয়ার মতো পূর্ণতা আসে না। এ ছাড়া বিয়ের পর পরস্পরকে বোঝার ও জানার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। সন্তান হওয়ার পর তাকে আদর-যত্ন দিয়ে বড় করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং সন্তান লালনপালন করার মতো যথেষ্ট আয় রোজগার আছে কিনা তা ভেবে-চিন্তে সন্তান নেয়া উচিত।
দেরিতে সন্তান চাইলে বা আর কোনো সন্তান না চাইলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এ পদ্ধতিগুলোকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বলে। প্রচলিত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিগুলো হলো- খাবার বড়ি, কনডম, আইইউডি (কপার-টি), ইনজেকশন, নরপ্ল্যান্ট, মহিলা বন্ধ্যাকরণ (টিউবেকটমি/লাইগেশন) এবং পুরুষ বন্ধ্যাকরণ (এনএসভি/ ভ্যাসেকটমি)। তবে মহিলা বন্ধ্যাকরণ (লাইগেশন) ও পুরুষ বন্ধ্যাকরণ (এনএসভি) যেগুলো স্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত সেগুলো পরিপূর্ণ পরিবার (দুই সন্তান)-এর জন্য।
যৌনমিলনের সময় ছেলেদের শুক্রাণু মেয়েদের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে মেয়েদের গর্ভধারণ হয় এবং পেটে বাচ্চা আসে। পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে গর্ভধারণ হয় না।
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি দু’রকম, অস্থায়ী এবং স্থায়ী পদ্ধতি। যতদিন অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ততদিন পেটে বাচ্চা আসে না, ব্যবহার বন্ধ করার পর বাচ্চা চাইলে আবার বাচ্চা হয়। খাবার বড়ি, কনডম, আইইউডি (কপার-টি), ইনজেকশন ও ইমপ্ল্যান্ট অস্থায়ী পদ্ধতি। কাজেই যারা মনে করে এসব পদ্ধতি ব্যবহার করলে বাচ্চা হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাদের ধারণা ভুল। তবে স্থায়ী পদ্ধতি (যেমন: লাইগেশন ও এনএসভি) গ্রহণ করলে বাচ্চা একেবারেই হয় না। তাই কোনো স্বামী-স্ত্রী যদি স্থায়ী পদ্ধতি (যেমন: মহিলা বা পুরুষ বন্ধ্যাকরণ) গ্রহণ করেন, তাহলে বাচ্চা হওয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

যৌনরোগ

নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন খুবই স্বাভাবিক। তবে এতে সামাজিকতা ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলা অত্যাবশ্যক। আমরা অনেকেই মনে করি, কিছু কিছু বিষয়, যেমন- যৌনসম্পর্ক, যৌনরোগ, যৌন আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা ঠিক নয়। এ সব বিষয় সম্পর্কে জানলে মানুষ খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি জানলে কোনটি করা উচিত (নিরাপদ) এবং কোনটি করা উচিত নয় (ঝুঁকিপূর্ণ), আর করলে তার ফলাফল কি হতে পারে তা জানা যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। যেমন ধরা যাক, যৌনরোগ সম্পর্কে। অনেকেই মনে করতে পারে, যারা যৌনপল্লীতে বা ‘খারাপ জায়গায়’ যায় বা যৌনকর্মীদের সাথে যৌনসম্পর্ক করে, তাদের যৌনরোগ হয়। আমরা অনেকে খারাপ জায়গা বলতে যৌনপল্লী মনে করি। যৌনরোগ হওয়া শুধুমাত্র যৌনপল্লীতে যাওয়ার উপর নির্ভর করে না। অনেকে মনে করে, ‘আমি যেহেতু ও রকম কোনো জায়গায় যাই না, এ বিষয়ে আমার জানার দরকারও নাই।’ কিন্তু যৌনপল্লীতে না গেলেও যৌনরোগ হতে পারে। কোনো সংক্রমিত/আক্রান্ত লোকের সাথে যেকোনো ধরনের যৌনমিলন করলে যৌনরোগ হতে পারে। তাই আমরা যদি যৌনরোগ কি, কীভাবে হয়, কি করলে এই রোগ হবে না, রোগের লক্ষণগুলো কি কি, চিকিৎসা না করালে তার ফলাফল কি হতে পারে এবং এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কোথায় সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে তা পুরোপুরিভাবে জানি, তাহলে আমরা এ রোগ থেকে সাবধান থাকবো, নিজেকে এবং অন্যদেরও রক্ষা করতে পারবো। অবৈধ যৌনমিলন তা যে কোনো বয়সেই হোক না কেন, সেটা অনৈতিক এবং সমাজে ও ধর্মে তা গ্রহণযোগ্য নয়। একমাত্র বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কই বৈধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।
একটি মেয়ে যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার মাসিকের রাস্তা থেকে এক ধরনের সাদা বা হালকা হলুদ স্রাব বের হতে শুরু করে। এই বয়সে স্র্রাব হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্র্রাবের পরিমাণ কোনো মেয়ের কম, আবার কোনো মেয়ের বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক স্র্রাব কখনও জমাট বাঁধা, আঠালো বা পাতলা হতে পারে। তবে যোনিপথে বা জরায়ুতে কোনো সংক্রমণ (ইনফেকশন) হলে স্রাবের ধরন অন্যরকম হয়। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ফেনা ফেনা পানির মতো অথবা গন্ধযুক্ত বা গাঢ় হলুদ স্র্রাব বের হতে পারে। অনেক সময় এর সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকতে পারে। এরকম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (ইনফেকশন) বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার না করলে, বাচ্চা হবার সময় অপরিষ্কার হাতে প্রসব করালে বা সঠিক উপায়ে জীবাণুমুক্ত না করে জিনিসপত্র ব্যবহার করলে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু যৌনরোগ যেমন : গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি হলেও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের ফলে অস্বাভাবিক স্র্রাব হতে পারে।
একটি মেয়ে যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার মাসিকের রাস্তা থেকে এক ধরনের সাদা বা হালকা হলুদ স্রাব বের হতে শুরু করে। এই বয়সে স্র্রাব হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। স্র্রাবের পরিমাণ কোনো মেয়ের কম, আবার কোনো মেয়ের বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক স্র্রাব কখনও জমাট বাঁধা, আঠালো বা পাতলা হতে পারে। তবে যোনিপথে বা জরায়ুতে কোনো সংক্রমণ (ইনফেকশন) হলে স্রাবের ধরন অন্যরকম হয়। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ফেনা ফেনা পানির মতো অথবা গন্ধযুক্ত বা গাঢ় হলুদ স্র্রাব বের হতে পারে। অনেক সময় এর সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকতে পারে। এরকম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ (ইনফেকশন) বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার না করলে, বাচ্চা হবার সময় অপরিষ্কার হাতে প্রসব করালে বা সঠিক উপায়ে জীবাণুমুক্ত না করে জিনিসপত্র ব্যবহার করলে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু যৌনরোগ যেমন : গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি হলেও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের ফলে অস্বাভাবিক স্র্রাব হতে পারে।
দৈহিক মিলন বা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় তাকে যৌনরোগ বলে। যেমন: গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্লামাইডিয়া, হার্পিস, এইচআইভি-এইডস, হেপাটাইটিস-বি, সি এবং ডি ইত্যাদি। তবে কোনো কোনো সময় এ রোগ অন্যভাবেও ছড়াতে পারে। যৌনরোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ (ইনফেকশন) বা অসুখ হতে পারে। যেমন: সিফিলিস ও গনোরিয়া হলে যৌনাঙ্গে ঘা হয়। এর সাথে স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপি-, চামড়া, গর্ভজাত শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। আবার এইডস, হেপাটাইটিস-বি, সি এবং ডি নামে কিছু যৌনবাহিত রোগ আছে। এসব রোগ হলে যৌনাঙ্গে অসুখ হয় না। কিন্তু শরীরের অন্যান্য জায়গায় সমস্যা বা লক্ষণ দেখা যায়।
যে সমস্ত আচরণ বা কাজের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সুস্থ আরেক জনের শরীরে যৌনরোগ ছড়ায় সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বলে। যৌনরোগ থেকে নিজেকে ও অন্যকে বাঁচাতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিত্যাগ করা উচিত। এ আচরণগুলো হচ্ছে-  আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার না করা  একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা এবং যৌন পল্লীতে গমন করা।  ইনজেকশন নেয়ার সময় সুচ বা সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করা  শিরার মাধ্যমে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ সময় সুচ/সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করা হয় এবং একের অধিক জন একই সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করা  যৌনরোগ আছে এমন কারো রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শরীরে গ্রহণ করা  আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্ম দেয়া/বুকের দুধ খাওয়ানো

বিয়ে

দেশের বর্তমান বিবাহ আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য মেয়েদের বয়স কমপক্ষে ১৮ ও ছেলেদের বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও অধিকাংশ মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়।
অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এ বয়সে ছেলে বা মেয়েদের বাবা কিংবা মা হবার মতো মানসিক ও শারীরিক পূর্ণতা আসে না। এ ছাড়াও অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার ফলে মা হতে গিয়ে মেয়েরা বিভিন্ন জটিল অবস্থার মুখোমখি হয়। অল্প বয়সে বিয়ে না করে ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে জীবনটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেয়া যায়।
আমাদের সমাজে অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদেরকে নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। উপযুক্ত পাত্র পেলেই বিয়ে দিয়ে দেন। তারা মনে করেন মেয়েদের বিয়ে দিলে সন্ত্রাসী বা বখাটে ছেলেদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবার কখনো ভালো পাত্র পেলেও বাবা-মায়েরা অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। মনে করেন এতো ভালো পাত্র পরে না-ও পেতে পারেন। কখনো কখনো সামাজিক চাপে পড়ে বাবা-মা অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেন। দারিদ্র্যের কারণেও অনেক বাবা-মা অল্প বয়সে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে দেন। কখনো কখনো বরপক্ষ কম বয়সের মেয়েকে পাত্রী হিসেবে পছন্দ করে। অন্যদিকে কিছু কিছু মেয়েপক্ষ মনে করে যে, মেয়েদের বয়স বেশি হলে, বিয়ের জন্য ভালো পাত্র পাওয়া যায় না। কারণ যা-ই হোক না কেন, অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মেয়েদের ১৮ বছরের আগে এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ে দেয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তাই নয়, কেউ ১২ বছরের কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে করলে, সে নারী ও শিশু নির্যাতন বা শ্লীলতাহানি আইনের আওতায় পড়বে এবং আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি পাবে। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা জরিমানাসহ সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। আর ১২ বছরের বেশি বয়সি ও ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে করলে ২ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় একটি ছেলেকেই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয় এবং বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্বও স্বামীকে নিতে হয়। এসব কারণে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছেলেদের বিয়ে করতে দেরি হয়।

যৌতুক

কোনো কোনো সময় দেখা যায় যে, বিয়ের সময় বা পরে ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষের কাছ থেকে টাকা পয়সা বা ‘উপহার’ চেয়ে নেয় বা দাবি করে, একে যৌতুক বলে। তবে যৌতুক ধর্মীয় কোনো নিয়ম বা শর্ত নয়। যৌতুক দেয়া-নেয়া আমাদের সমাজে সামাজিক ব্যাধি হিসাবে প্রচলন আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছেলেপক্ষ যৌতুক দাবি করে। কিন্তু যৌতুক আমাদের দেশে আইনত দণ্ডনীয়। যৌতুক দেয়া এবং নেয়া উভয়ই অপরাধ এবং এর জন্য জেল-জরিমানার ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে অনেক মেয়ে যৌতুকের শিকার হয়ে নির্যাতিত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। এই যৌতুকপ্রথা বন্ধ করার জন্য সরকারি আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী যিনি যৌতুক দেন এবং নেন তাদের দু’জনেরই ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। আবার জেল ও জরিমানা দুটোই হতে পারে। যৌতুক বন্ধ করার জন্য সরকারি আইন থাকলেও শুধুমাত্র আইন দিয়ে যৌতুক প্রথা বন্ধ করা যাবে না। যৌতুক প্রথা বন্ধ করতে হলে পাত্র-পাত্রী ও পিতামাতাসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। তোমরা মেয়েরা যৌতুক দিয়ে বিয়ে করবে না এবং ছেলেরা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবে না- এই মানসিকতা ও প্রতিজ্ঞা এখন থেকেই তোমাদের নিতে হবে। আমাদের দেশে কেউ কেউ যৌতুককে সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি হিসেবে মনে করে। বিয়েতে যতো বেশি যৌতুক আদায় করা যায় বা দেয়া যায় ততোই যেন সম্মান বেড়ে যায়। কখনো ছেলে নিজে, তার বাবা-মা বা অভিভাবকরা যৌতুক দাবি করে। আবার অনেক পরিবারে যৌতুক দেয়া-নেয়ার প্রচলনও দেখা যায়। আমাদের সমাজে অনেকে মেয়েদের অন্যের ওপর নির্ভরশীল মনে করে। কোনো কোনো ছেলেপক্ষ মনে করে একটা মেয়েকে বিয়ে করা মানে তাকে ও তার মা-বাবাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা। তাই ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষের কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পেতে চায়। অনেক সময় পরিবেশ, পরিস্থিতির ওপরও এগুলো নির্ভর করে। অনেক সময় ছেলেপক্ষ আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে, ছেলের পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য বা ছেলে বেকার হলে ব্যবসা করার জন্য যৌতুক চায়। তবে যেকোনো অবস্থাতেই যৌতুক নেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
বিয়ের পরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে বনিবনা না হলে স্বামী তার স্ত্রীকে বা স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে। স্ত্রী যদি স্বামীর বা তার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় অথবা স্বামী যদি স্ত্রীকে অবৈধ কাজে বা সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করে, স্বামী যদি নিখোঁজ থাকে, অপ্রকৃতস্থ হয় এবং যৌন অক্ষম থাকে, তাহলেও স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। তা ছাড়া অন্য নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে কিংবা নৈতিকতা বর্জিত জীবনযাপন করলেও স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেবার অধিকার রাখে।

গর্ভধারণ

একটি মেয়ের মাসিক শুরু হয় ১২-১৩ বছর বয়সে এবং মাসিক শুরু হবার পর থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। এই ডিম্বাণু সাধারণত দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের থলি থেকে ডিম্ববাহী নালীতে আসে। এই সময়ে যদি যৌনমিলন হয়, তাহলে পুরুষের শুক্রাণু যোনিপথ দিয়ে ডিম্ববাহী নালীতে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হবার ফলে ভ্রুণ তৈরি হয়। একে গর্ভধারণ বলে। এই ভ্রুণ কয়েক দিন পর জরায়ুতে এসে পৌঁছে এবং সেখানে বড় হয়ে শিশুতে পরিণত হয়। এ সময় শিশুটি একটি গর্ভ-ফুলের (ফুল) মাধ্যমে মায়ের জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে এবং গর্ভ-ফুলের মধ্য দিয়ে শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পায়। সাধারণত ৯ মাস ৭ দিন এভাবে মায়ের জরায়ুতে কাটানোর পর মায়ের প্রসব ব্যথা ওঠে এবং শিশু যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। একেই প্রসব বা ডেলিভারি বলে। কখনো কখনো সমস্যা থাকলে পেট কেটে বা অপারেশন করে বাচ্চা বের করা হয়।
একবার মাত্র যৌনমিলন হলেও গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। যৌনমিলনের সময় যদি একটি ছেলের শুক্রাণু একটি মেয়ের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় তাহলে মেয়েটি গর্ভবতী হতে পারে। শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলন না ঘটলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। তাই কতবার যৌনমিলন হলো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলনটাই গর্ভধারণের প্রধান কারণ।
শুধু বিয়ের পরে স্বামীর সাথে যৌনমিলনে একটি মেয়ে গর্ভবতী হয় না, বিয়ের আগে যৌনমিলন হলেও পেটে বাচ্চা আসতে পারে। কারণ যৌনমিলনের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু যখন মেয়েদের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়, তখন একটি মেয়ের পেটে বাচ্চা আসে।
গর্ভধারণের পর মেয়েদের প্রথম যে লক্ষণ দেখা যায় তা হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। যদি শারীরিক মিলন হওয়ার পর মাসিক হওয়ার নির্দিষ্ট দিন পার হয়ে যায় এবং মাসিক শুরু না হয় তাহলে ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকের এ সময় বমি বমি ভাব লাগা ও মাথা ঘোরানো, খাওয়ায় অরুচির মতো লক্ষণগুলোও দেখা যেতে পারে। ইদানিং বাজারে গর্ভধারণ পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন্ নামে ‘প্রেগনেন্সি টেস্ট স্ট্রিপ’ বা ‘গর্ভধারণ পরীক্ষার স্ট্রিপ’ পাওয়া যায়। এই ‘প্রেগনেন্সি টেস্ট স্ট্রিপ’-এর মাধ্যমে খুব সহজে ঘরে বসে নিজেই নিজের প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা জানতে পারে।
সাধারণত মাসিক শুরু না হলে বাচ্চা হয় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মাসিক না হলেও বাচ্চা হতে পারে। স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়, তারপর মাসিক হয়। তাই জীবনে প্রথম মাসিক হবার আগেই প্রথম পরিপক্ক ডিম্বাণু যদি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় তাহলে দেখা যায়, মেয়েটির মাসিক শুরু হয়নি অথচ গর্ভবতী হয়ে গেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রথম মাসিক হবার আগে যৌনমিলন হলে পেটে বাচ্চা আসতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চা প্রসবের পরে বেশ কয়েকমাস মাসিক বন্ধ থাকতে পারে এবং এ সময়ে মাসিক বন্ধ থাকলেও একটি মেয়ে আবার গর্ভবতী হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকে মনে করে বাচ্চা হবার পর মাসিক বন্ধ থাকলে পেটে বাচ্চা আসে না। আবার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালেও বাচ্চা হবার ভয় থাকে না। কিন্তু বুকের দুধ খাওয়ালে বা মাসিক বন্ধ থাকলেও পেটে বাচ্চা আসতে পারে। তাই প্রসবের ৬ সপ্তাহ পর থেকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন।

গর্ভকালীন সেবা/যত্ন

একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য গর্ভবতী মহিলার অনেক ধরনের সেবা প্রয়োজন। গর্ভবতী হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যেতে হবে। এ সময়ে প্রায় প্রতি মাসেই ডাক্তারের বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিতে হয়। ৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২টি টিটি টিকা নিতে হয়। এ সময় বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। গর্ভকালীন সময় ভারি কোনো কাজ করা যাবে না। এ সময় হাসিখুশি থাকতে হবে এবং দিনে ১ থেকে ২ ঘন্টা বিশ্রাম ও রাতে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে ডেলিভারি করানো নিরাপদ। যদি তা সম্ভব না হয় তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী দ্বারা ডেলিভারি করাতে হবে। তবে গর্ভকালীন সময়ে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া ছাড়াও কিছু কিছু যত্ন ও সেবা আছে যা মা এবং তার পরিবারের সবাই মিলে নিশ্চিত করবেন
বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চা পরীক্ষা করা উচিত এবং ডাক্তারের নির্দেশ মতো ওষুধ খাওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খেলে বাচ্চা নষ্ট হবার ভয় থাকে না।
বাচ্চা পেটে আসা ও বাচ্চা হওয়া একটি মেয়ের জীবনে স্বাভাবিক ঘটনা। বাচ্চা পেটে আসার পর যদি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা যায় এবং প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ সেবাদানকারী দ্বারা ডেলিভারি করানো হয় তাহলে মায়ের সাধারণত কোনো ভয় থাকে না।
সন্তান প্রসবের সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে যাওয়াই নিরাপদ। সন্তান জন্মদান একজন মায়ের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সন্তান জন্মদানের সময় অনেক রকম সমস্যা হতে পারে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার, নার্স, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সব পাওয়া যায়। তাই প্রয়োজনে যেকোনো জরুরি অবস্থা সামলানো যায়। কিন্তু বাসায় এসব ব্যবস্থা থাকে না। যদি একান্তই বাসায় ডেলিভারি করাতে হয়, তবে অবশ্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর দ্বারা ডেলিভারি করানো উচিত এবং সব ধরনের জটিলতা মোকাবিলা করার জন্য যথাযথ বন্দোবস্ত রাখা উচিত। যেমন- জরুরি প্রয়োজনের জন্য কিছু টাকা-পয়সা হাতে রাখা। এ ছাড়াও তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর জন্য কোনো গাড়ি বা পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা এবং রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে লোক ঠিক করে রাখা উচিত।
সন্তান ডেলিভারির কিছুক্ষণ পরেই আপনাআপনি ফুল পড়ে যায়। আর যদি না পড়ে তবে সাথে সাথে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে যেতে হবে।

খাবার বড়ি

মিশ্র খাবার বড়ি থেকে এখন পর্যন্ত কোন ক্যান্সার হবার কথা প্রমাণিত হয় নি। উপরন্তু এটা ২ ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে, যেমন- • ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার • এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার
খাবার বড়ি গ্রহণকালে কোন বিরতির প্রয়োজন নেই বরং হঠাৎ বিরতি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভের কারণ হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবার বড়ি খাওয়ার পর কোন মহিলা গর্ভবতী হলে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের কোন সম্ভাবনা নেই। এমনকি কোন মহিলা যদি গর্ভবতী হবার পরও খাবার বড়ি খেয়ে থাকেন তবুও তাদের শিশু বিকলাঙ্গ হবার অথবা গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে না।
খাবার বড়ি কোন মহিলাকে অনুর্বর বা বন্ধ্যা করে না। প্রজননক্ষম মহিলা বড়ি খাওয়া বন্ধ করলেই গর্ভধারণে সক্ষম হবেন। তবে খাবার বড়ি খাওয়া বন্ধ করার পর গর্ভধারণের জন্য কিছু মহিলাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
অবশ্যই খেতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন বয়সসীমা নেই। বিধিনিষেধ না থাকলে সকল বয়সী মহিলার জন্য মাসিক বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত খাবার বড়ি একটি উপযুক্ত পদ্ধতি। তবে ৩৫ বছর কিংবা তারচেয়ে বেশি বয়সী মহিলা যারা ধূমপান করেন বা তামাকপাতা সেবন করেন তাদের জন্য অবশ্যই মিশ্র খাবার বড়ি নিষিদ্ধ।

ইনজেকশন

হ্যাঁ, ডিএমপিএ স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য গ্রহণযোগ্য। প্রসবের ৬ সপ্তাহ পরই এটা শুরু করা যায়।
না, কেননা এটা স্বাভাবিক। মাসিক বন্ধ থাকায় ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করার কোন কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার এবং মোটেও ক্ষতিকর নয়। যদি মাসিক বন্ধ থাকায় তিনি বিব্রত বোধ করেন তবে তিনি অন্য কোন প্রদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন।
বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের নীতিমালা অনুযায়ী কেবলমাত্র বিবাহিত মহিলারা যাদের কমপক্ষে ১টি জীবিত সন্তান আছে তারাই ডিএমপিএ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া অন্য কোন স্বাস্থ্যগত নিষেধ না থাকলে যে কোন বয়সী মহিলা বা যুবতী ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন।
না, জন্মনিরোধক ইনজেকশন স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব করে না। তবে ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করার পর পুনরায় গর্ভধারণে কিছুটা দেরী হতে পারে।

ইমপ্ল্যান্ট

বাংলাদেশের নীতিমালা অনুযায়ী কেবলমাত্র বিবাহিত মহিলাদের জীবিত সন্তান থাক বা না থাক, ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন। বয়সের সাথে ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি নব বিবাহিত মহিলাও ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন। অন্য কোন কারণ না থাকলে ম্যানোপজ পর্যন্ত ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করা যায়।
না, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ইমপ্ল্যান্ট শরীরে কোন ক্ষতি করে না। তবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে ও জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হতে পারে। তাই ইমপ্ল্যান্ট খুলে নতুন সেট পরা যায় বা অন্য কোন জন্মনিরোধক ব্যবহার করা যেতে পারে।
হ্যাঁ, ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারকারী মহিলা গর্ভবতী হলে তা খুলে ফেলার জন্য সেবা কেন্দ্রে যাবেন।
না, ইমপ্ল্যান্ট প্রয়োগের পূর্বে তলপেট পরীক্ষা অত্যাবশ্যক নয়। তবে, মহিলার প্রজননতন্ত্রে কোন অসুবিধা আছে কি-না তা জানার জন্য তলপেট পরীক্ষা করাই ভাল।
হ্যাঁ, আমাদের দেশে ইমপ্ল্যান্ট খোলা নিশ্চিত করা এবং গ্রহীতার কোন শারীরিক অসুবিধা আছে কি-না দেখার জন্য তাকে ৩ বার ফলো-আপে আসতে হবে।

আইইউডি

আইইউডি কখনোই শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘুরে বেড়াতে পারে না। নগন্য ক্ষেত্রে জরায়ুর দেয়াল ভেদ করে পেটের মধ্যে আসতে পারে। এটা জরায়ুর ভিতরে আইইউডির ধীর গতিতে চলাচলের জন্য নয়, বরং সম্ভবত আইইউডি পরানোর সময় প্রয়োগকারীর ভুলের জন্য হয়ে থাকে।
না, আইইউডি খুলে ফেলার পর একজন মহিলা সহজেই গর্ভবতী হতে পারেন।
না, আমাদের দেশের নীতিমালা অনুযায়ী আইইউডি গ্রহণকারীর অবশ্যই কমপক্ষে ১টি জীবিত সন্তান থাকতে হবে।
হ্যাঁ, যদি হাসপাতালে প্রসব হয় এবং যিনি আইইউডি প্রয়োগ করবেন তার এ ব্যাপারে সঠিক প্রশিক্ষণ থাকে, তবে স্বাভাবিক প্রসবের পরপরই এবং সিজারিয়ান আপারেশনের সময় আইইউডি প্রয়োগ করা যায়।
যদি উপযুক্ত ও সুস্থ গ্রহীতাকে সঠিকভাবে আইইউডি পরানো হয় তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি খুব কম থাকে এবং এন্টিবায়টিকের প্রয়োজন পড়ে না।

জরুরী গর্ভনিরোধক

মাসিকচক্রের সাধারণত কোন পরিবর্তন হয় না, তবে কারো কারো মাসিক কয়েকদিন আগে বা পরে হতে পারে।
বুদ্ধিমান লোকদের তো একবারও ব্যবহার করা উচিৎ নয়। তবে গ্রহীতার চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা দেওয়া যেতে পারে।

স্থায়ীপদ্ধতি

খোজা করা বা খাসী করা হলো অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেয়া। যেমন- গরুর অন্ডকোষ কেটে ফেলে দিয়ে বলদ বানানো হয়। অনেক আগে রাজা-বাদশাদের রাজপুরী পাহারা দেওয়ার জন্য খোজা সৈন্য রাখা হতো। অন্ডকোষ কেটে ফেলার জন্য তারা সহবাস করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলত। হাদীসে “খোজা” করা নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। কারণ খোজা করলে যৌনক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ভ্যাসেকটমিতে অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেয়া হয় না। অন্ডকোষ পুরুষ হরমোন আগের মত তৈরি করে থাকে, ফলে পুরুষ হরমোন শরীরে ঠিক থাকে। ফলে পুরুষালীভাব ঠিক থাকে এবং যৌনক্ষমতা নষ্ট হয় না। আগের মত সহবাস করা যায় এবং বীর্যপাতও আগের মতই হয়। বরং স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় যৌনক্ষমতা ও তৃপ্তি বৃদ্ধি পায়। ভ্যাসেকটমি করালে শুধুমাত্র সন্তান জন্মদান করা যায় না। কারণ বীর্যে শুক্রকীট থাকে না।
হ্যাঁ, বীর্যপাত আগের মতই হয়, বীর্যে শুধু শুক্রকীট থাকে না, তাই সন্তান হয় না। শুক্রকীট ও কিছু জলীয় পদার্থ নিয়ে বীর্য তৈরি হয়। শুক্রকীট তৈরি হয় অন্ডকোষে। জলীয় পদার্থ তৈরি হয় বীর্যথলি থেকে ৭০%, প্রস্টেট গ্রন্থি থেকে ২৫% ও অন্ডকোষ থেকে ৫%, খুবই অল্প পরিমাণ বালবো-ইউরেথ্রাল গ্রন্থি থেকে। ভ্যাসেকটমি অপারেশনের পর বীর্যের পরিমাণ মাত্র ৫% কমে গেলেও ভ্যাসেকটমি করা কোন পুরুষ বুঝতে পারেন না এবং যৌন আনন্দের কোন হেরফের হয় না।
ভ্যাসেকটমি করলে যৌনক্ষমতা বা যৌনমিলনের ক্ষমতা কমে না; আগের মতই ঠিক থাকে। বরং সন্তান হবে এই চিন্তা না থাকায় যৌনমিলনের ক্ষমতা, ইচ্ছা ও তৃপ্তি আরো বেড়ে যায়। শুক্র ও ডিম্বের সংগে সন্তান জন্মদানের সম্পর্ক আছে, যৌনমিলনের আনন্দের সম্পর্ক নেই। সুতরাং এসব অপারেশন করা হলে ক্ষমতা বা আনন্দ কমে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পুরুষের অন্ডকোষ থেকে পুরুষদের হরমোন ও মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে মহিলাদের হরমোন তৈরি হয়। ভ্যাসেকটমি এবং টিউবেকটমি অপারেশনে অন্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ে কিছু করা হয় না বলে পুরুষদের পুরুষালীভাব এবং মহিলাদের মেয়েলীভাব আগে মতই ঠিক থাকে। এই সকল অপারেশনে অন্ডকোষ ও ডিম্বাশয় আগের মত থাকে এবং আগের মতই হরমোন তৈরি করে থাকে। ফলে যৌন আনন্দ আগের মত থাকে।
শরীরের শক্তি নির্ভর করে প্রতিদিনের খাদ্যের উপর। সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করলে এবং রোগ না থাকলে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং শক্তিও পাওয়া যায়। ভ্যাসেকটমি বা টিউবেকটমি করালে শরীরের পরিশ্রম করার ক্ষমতা কমে না; ভারী কাজ করতেও কোন অসুবিধা হয় না। টিউবেকটমি অপারেশন খুবই সামান্য পেট কাটা হয় (১ – ১.৫ ইঞ্চি), তাই ভারী কাজ করতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। পুরুষেরাও ভ্যাসেকটমি অপারেশনের পর ভারী কাজ আগের মতই করতে পারেন। ভারী কাজ করার সাথে এই অপারেশনের কোন সম্পর্ক নেই।
টিউবেকটমি অপারেশন করলে তলপেটে চাকা হয় না কিংবা ব্যথা করে না। এই ধরণের অসুখের সাথে টিউবেকটমির কোন সম্পর্ক নেই। টিউবেকটমি না করালেও অনেক মহিলার তলপেটে ব্যথা ও চাকা হতে পারে। যদি তলপেটে চাকা হয় বা ব্যথা করে তাহলে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

এইচআইভি-এইডস

এইডস হচ্ছে A = অ্যাকোয়ার্ড (অর্জিত) I = ইমিউন (রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা) D = ডেফিশিয়েন্সি (হ্রাস) S = সিনড্রোম (অবস্থা) অর্থাৎ বিশেষ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অবস্থাকে এইডস বলে।
এইচআইভি’র কারণে এইডস হয়। এইডস-এর ভাইরাস বেশির ভাগ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে যৌনমিলন ছাড়া অন্যভাবেও যেমন- জীবাণুমুক্ত না করা সুচ ব্যবহার, শিরায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, সংক্রমিত রক্ত শরীরে গ্রহণ ও সংক্রমিত মা থেকে শিশুর মধ্যে এইডস-এর ভাইরাস ছড়াতে পারে। আজ পর্যন্ত এইডস-এর কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। উন্নত দেশে এর চিকিৎসা বের হয়েছে, তবে এ চিকিৎসা এইডস হবার সময়কে বিলম্বিত করে মাত্র। তা ছাড়া এ চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এইডস হলে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি। তাই এই শারীরিক অবস্থাকে দুরারোগ্য ব্যাধি বলে মনে করা হয়। আমরা জানি রোগের জীবাণু শরীরে ঢুকলে সব সময় আমাদের অসুখ হয় না। আমাদের শরীরে একটি ক্ষমতা বা শক্তি আছে যা রোগজীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে তাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করে। একে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায় তখন যেকোনো রোগ আমাদের শরীরকে আক্রমণ করতে পারে। তাই কেউ এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে শেষ পর্যায়ে অন্য যেকোনো অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করে ধীরে ধীরে তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। কারণ এই ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়।
এ রোগের জীবাণুর নাম কী? H = হিউম্যান (মানুষের) I = ইমিউনো-ডেফিশিয়েন্সি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস) V = ভাইরাস (জীবাণু) আমরা আগেই জেনেছি, যে জীবাণু দিয়ে এইডস হয় তার নাম এইচআইভি। এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে থাকে। এভাবে নষ্ট হতে হতে এক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তখন বিভিন্ন রোগ আমাদের শরীরকে আক্রমণ করে, চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয় না। বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা দেবার পর আমরা এই শারীরিক অবস্থাকে এইডস বলি।
শরীরে এইচআইভি ঢোকার পর সাথে সাথে কোনো লক্ষণ থাকে না বা কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। তবে শরীরে প্রবেশের পরপরই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে বিভিন্নভাবে (১২ ও ২০ পাতায় বর্ণিত) আরেক জনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। বাইরে থেকে কারো শরীরে এইচআইভি আছে কি না বোঝা যায় না। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে এই ভাইরাস আছে কিনা জানা যায়। এইচআইভি শরীরে ঢোকার পর থেকে কত বছর পর এইডস হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটা ৫ বছর হতে পারে আবার ১৫ বছরও হতে পারে। বিভিন্ন অবস্থার উপর (৩২ পাতায় বর্ণিত) তা নির্ভর করে। তবে একবার এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করলে এক সময় এইডস দেখা দেবেই, এর হাত থেকে রক্ষা নেই।
এইচআইভি সংক্রমণের কারণে এইডস হয়। এইডস-এর প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনমিলনের মাধ্যমে এইডস ছড়ায়। তবে এইচআইভি বিভিন্নভাবে একজনের শরীর থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়াতে পারে। যেমন:  যার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে তার সাথে যেকোনো ধরনের যৌনমিলন করলে, এইচআইভি ঐ ব্যক্তির শরীর থেকে তার যৌনসঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে যায়  যার শরীরে এইচআইভি রয়েছে তার রক্ত বা যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য কারো শরীরে দেয়া হলে  এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সুচ, সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে অন্য কারো শরীরে ইনজেকশন দেয়া হলে  যে সব গর্ভবতী মায়ের শরীরে এইচআইভি রয়েছে, সেই মায়ের কাছ থেকে ক) গর্ভাবস্থায় খ) প্রসবের সময় বা গ) বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারো শরীরে এইচআইভি আছে কিনা, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। বাইরে থেকে তাকে দেখতে যেকোনো সুস্থ এবং স্বাভাবিক মানুষের মতো লাগে। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে এই ভাইরাস আছে কিনা জানা যায়। তাই দেখতে সুস্থ, স্বাস্থ্যবান মানুষ মনে হলেও তার মধ্যে এইচআইভি থাকতে পারে। তার সাথে কনডম ছাড়া যৌনমিলন করলে এই ভাইরাস যৌনসঙ্গীর শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যাপারটি এরকম যে, যার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে সে নিজেও বুঝতে পারে না। কেননা তার তখন হয়তো কোনো সমস্যা বা অসুস্থতা নেই। যৌনমিলনের সময় তার কাছ থেকে তার যৌনসঙ্গীর শরীরে যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তাও সে জানতে পারছে না। আবার তার যৌনসঙ্গীর সাথে অন্য কারোর যৌনমিলন হলে তার সঙ্গীর কাছ থেকে আবারও অন্য জনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবেই এইডসের ভাইরাস মহামারী আকারে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু যৌনমিলন নয়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সুচ, সিরিঞ্জ দিয়ে অন্য কাউকে ইনজেকশন দিলে তা বা তার রক্ত অন্য কারোর শরীরে দেয়া হলে এই ভাইরাস অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু কেউ তা বুঝতে পারে না।

কনডম

হ্যাঁ, যদি ব্যবহারকারী প্রত্যেকবার যৌনমিলনের সময় সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করেন। তবে কনডম সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে অথবা প্রতিবারই নতুন কনডম ব্যবহার না করলে কনডমের কার্যকারীতা অনেক কমে যায়।
কনডম এইচআইভি, এইডস সহ যৌনবাহিত সকল রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে যদি প্রতিবার যৌনমিলনের সময় সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করা যায়।
না, কনডম এইডস সহ সকল যৌনবাহিত রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করে। এইচআইভি ভাইরাস ল্যাটেক্স কনডমের ভিতর দিয়ে যেতে পারে না।
না, কখনোই নয়। সত্যিকার অর্থে কনডম লিঙ্গকে অধিকক্ষণ দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। পুরুষত্বহীনতার অনেক কারণ আছে। কিছু কারণ শারীরিক অ কিছু মানসিক। খুব কমসংখ্যক পুরুষ কনডম ব্যবহার করার ফলে লিঙ্গকে দৃঢ় রাখতে পারেন না এবং কনডম ব্যবহার করার কারণে বিব্রত অবস্থায় পড়েন। যদিও কনডম পুরুষত্বহীনতার কারণ নয়।
না। কেউ কনডম ব্যবহার করে কম আনন্দ পান, আবার কেউ কেউ আগের মতই বা আগের চেয়ে বেশি আনন্দ লাভ করেন। কারণ কনডম ব্যবহারে গর্ভবতী হওয়া বা যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার চিন্তা থাকে না। এছাড়াও যৌনমিলন ও বীর্যপাতের আগে আনন্দদায়ক সময়কে অধিকক্ষণ স্থায়ী করে।

মা ও শিশুর যত্ন

জন্মের পর পরই বাচ্চাকে বুকের দুধ দেয়া উচিত। এ সময় বুকের দুধ ঘন ও হলুদ রঙের থাকে, এই দুধকে শালদুধ বলে। কিন্তু অনেকে এ দুধ ভালো নয় মনে করে শিশুকে খাওয়াতে চায় না। শালদুধ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং শিশুর প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। এ দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর ও রোগ প্রতিরোধক উপাদান থাকে। যেসব শিশু শালদুধ খায় তাদের ডায়রিয়া, হাম, সর্দি, কাশি ইত্যাদি কম হয়।
বাচ্চার জন্মের পর থেকে পূর্ণ ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। বাচ্চার জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ দেয়া উচিত। এ সময় বুকের দুধ ছাড়া মধু, পানি ইত্যাদি কোনো কিছুই শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই হচ্ছে শিশুর আদর্শ খাবার। বাচ্চা যত ঘন ঘন চুষবে, মায়ের বুকের দুধ তত বেশি তৈরি হবে। ৬ মাস শেষ হবার পর বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে। যেমন- সবজি, খিচুড়ি, ডিম, কলা, মিষ্টিকুমড়া, ডাল, লাল শাক, সুজি ইত্যাদি। বুকের দুধে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও ক্যালসিয়াম থাকে, যা শরীর, হাড় ও দাঁত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দুই বছর পর্যন্ত শিশু খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়, তাই এ সময়ে মায়ের বুকের দুধ খুবই দরকারি। বাচ্চা জন্ম নেবার পর ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মা ও শিশুর বিশেষ যতেœর প্রয়োজন হয়। প্রসবের পর মায়ের প্রয়োজনীয় যত্ন নেয়া হলে মা সুস্থ থাকে এবং শিশুর যত্ন নিতে পারে।
 বাচ্চাকে জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে শালদুধ এবং প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে  পূর্ণ ৬ মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার ২ বছর পর্যন্ত দিতে হবে  সন্তান জন্মের ৬ সপ্তাহ পর ১০টি মারাত্মক রোগ, যেমন- ধনুষ্টংকার, হাম, পোলিওমাইলাইটিস, রুবেলা, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি জনিত রোগ, নিউমোকোক্কাল নিউমোনিয়া ও হেপাটাইটিস-বি রোগের টিকা দিতে হবে এবং ১ বছরের মধ্যে সবক’টি টিকা দেয়া শেষ করতে হবে  শিশুর বয়সের সাথে সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী পরিমিত পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে  বয়সের সাথে সাথে শিশুর বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে তা নিয়মিত দেখতে হবে  এক থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রতি ৬ মাস পরপর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে  বাচ্চার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, সময়মতো ঘুম, খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
ধনুষ্টংকার (টিটেনাস) হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিটি টিকা নিতে হয়। আমাদের দেশে অনেক মহিলা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তান জন্ম দেন। ফলে মা ও শিশুর ধনুষ্টংকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বাচ্চার নাড়ি কাটার সময় জীবাণুমুক্ত ব্লেড ও সুতা ব্যবহার না করলে ধনুষ্টংকারের জীবাণু শরীরে ঢুকে যায় এবং এই রোগে অনেক নবজাত শিশু মারা যায়। এসব কারণে সন্তান ধারণের উপযুক্ত বয়সি (১৫ থেকে ৪৯ বছর পর্যন্ত) সব মহিলার এই টিকা নেয়া উচিত।

গর্ভপাত

পেটের ভিতরে বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেলে মায়ের অনেক ক্ষতি হতে পারে। এসকল ক্ষতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ক) অতিরিক্ত রক্তপাত খ) ইনফেকশন ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব গ) প্রচন্ড পেটে ব্যথা ঘ) প্রচন্ড জ্বর ঙ) রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের (রক্ত যাওয়ার) সম্ভাবনা চ) সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করালে মায়ের স্বাস্থ্যহানি থেকে শুরু করে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
একবার বাচ্চা নষ্ট হলে আর বাচ্চা হবে না এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পেটের বাচ্চা কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে পরবর্তীতে আবার বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। তবে একবার বাচ্চা নষ্ট হলে পরের গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কেননা যার একবার গর্ভপাত হয় তার বার বার গর্ভপাতের আশংকা থেকে যায়। আবার অনেক সময় আংশিক গর্ভপাত হলে D&C (Dilation & Curettage) করে জরায়ুর ভিতর পরিষ্কার করা হয়। এ ব্যাপারে নিকটস্থ প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, অনভিজ্ঞ কারো দ্বারা D & C করালে জরায়ুর ভিতরের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পরবর্তীতে আর গর্ভধারণ নাও হতে পারে। এ ছাড়া এক্ষেত্রে জরায়ুর সংক্রমণেরও আশঙ্কা থাকে।
গর্ভপাত বা বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো- ক) মায়ের অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, আয়োডিন ঘাটতি খ) বাল্যবিবাহ ও কম বয়সে সন্তান গ্রহণ গ) ঘন ঘন সন্তান জন্ম দেয়া ঘ) গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ঙ) গর্ভকালীন সময় ভারি কাজ করা (যেমন: কাপড় ধোয়া, পানি ভরতি কলস কাঁখে নেয়া, ভারি বালতি বা হাঁড়ি তোলা)। চ) মায়ের শারীরিক রোগ/জটিলতা- যেমন-জরায়ুর অস্বাভাবিক গঠন, জরায়ুর টিউমার, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা, প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশন ইত্যাদি। ছ) গর্ভের বাচ্চার ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার জন্যও গর্ভপাত হয়। আবার মায়ের সবকিছু ঠিক থাকলেও স্নায়ুবিক বৈকল্য (Hypothalamic inhibition) এবং অজানা কিছু কারণে বাচ্চা নষ্ট হতে পারে।
বারে বারে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হওয়ার কারণগুলো হলো- ১. জেনেটিক বা বংশাণুক্রমিক সমস্যা- বাবা বা মায়ের যেকোনো একজনের বা উভয়ের ক্রটিপূর্ণ জিন (বাচ্চার বৈশিষ্ট্য ধারণকারী) শরীরে আসলে বাচ্চার ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যার কারণে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। ২. জরায়ুর (বাচ্চা ধারণের থলি) গঠনজনিত সমস্যা। ৩. মায়ের শারীরিক রোগ/জটিলতা- যেমন-জরায়ুর অস্বাভাবিক গঠন, জরায়ুর টিউমার, ডায়বেটিস, থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা, প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশন ইত্যাদি।
বেশি জোরে হাঁটলে বা কোনো প্রকার ভ্রমণ করলেই বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে এমন নয়, তবে পেটে বাচ্চা আসার পর বিশেষ করে প্রথম ৩ মাস একটু বেশি সচেতন থাকতে হয়। এই সময় ভারি কাজ করার ফলে বা বেশি দৌড়াদোড়ি বা ভ্রমণের ফলে গর্ভের ফুল জরায়ু থেকে আলাদা হয়ে যাবার ভয় থাকে। এতে মায়ের রক্তস্রাব শুরু হয়ে যেতে পারে। মায়ের এই রক্তস্রাব (যা সাধারণত পেটে বাচ্চা থাকার সময় হওয়ার কথা নয়) গর্ভপাতের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়।

বন্ধ্যাত্ব

অনেক সময় দেখা যায়, বিয়ের পর অনেকের বাচ্চা হয় না। অথচ তারা কোনো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছে না এবং বাচ্চা নিতে চাইছে। কোনো সমস্যা না থাকলেও কখনো কখনো বাচ্চা হতে দেরি হতে পারে। স্বামী বা স্ত্রী দুজনের কারও কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে যদি বাচ্চা না হয়, তবে তাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। বন্ধ্যাত্বের সম্ভাব্য কারণ  স্বামী বা স্ত্রীর যেকোনো একজনের প্রজননতন্ত্রের কোনো সমস্যা  যৌনরোগ সময়মতো এবং সঠিক নিয়মে চিকিৎসা না করা  এ ছাড়া মদ, গাঁজা খেলে বা মাদকাসক্ত হলেও যৌনক্ষমতা কমে যায়। এই কারণগুলোর মধ্যে অনেকগুলো প্রতিরোধ করা যায় ও চিকিৎসা করে সন্তান লাভ করা যায়। তবে চিকিৎসার জন্য স্বামী স্ত্রী দুজনকেই এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। আমাদের দেশে বাচ্চা না হওয়া সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আছে। যেমন- অভিশাপের কারণে, জাদুটোনার কারণে বা বাতাস লাগলে বাচ্চা হয় না। তবে কারো বাচ্চা না হলে এ ধরনের মনোভাব পোষণ করা ঠিক নয়।
আমাদের দেশে বাচ্চা না হলে সাধারণত মেয়েদের দায়ী করা হয় এবং বাঁজা বলে বিভিন্নভাবে অপমান ও অত্যাচার করা হয় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্বামী বা স্ত্রী যেকোনো একজনের যদি এমন কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে যা বাচ্চা হওয়ার জন্য বাধার সৃষ্টি করে তাহলে বাচ্চা না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি বাচ্চা না হয় তাহলে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়কেই চিকিৎসা করাতে হবে। বাংলাদেশেও উন্নত বিশ্বের মতো অনেক নতুন নতুন চিকিৎসা রয়েছে যা নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান লাভে সাহায্য করতে পারে। এমনকি ‘টেস্টটিউব বেবির’ মতো উন্নত চিকিৎসাও বাংলাদেশেই সম্ভব। তাই স্বামী বা স্ত্রীর যারই সমস্যা থাকুক না কেন নিরাশ না হয়ে অভিজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশে বাচ্চা না হলে সাধারণত মেয়েদের দায়ী করা হয় এবং বাঁজা বলে বিভিন্নভাবে অপমান ও অত্যাচার করা হয়। দেখা যায়, স্ত্রী একাই পীর-ফকির, ডাক্তার বা কবিরাজের কাছে যায়। কিন্তু স্বামী কোনো পরীক্ষা বা চিকিৎসা করায় না। কারণ মনে করা হয় বাচ্চা হওয়া না হওয়া সব কিছু মেয়েদের ওপর নির্ভর করে। কখনো কখনো বাচ্চা পাবার আশায় স্বামী আবার বিয়ে করে। কিন্তু স্বামীর সমস্যা থাকলে স্ত্রী একা ডাক্তারের কাছে গিয়ে কোনো লাভ হয় না। বরং স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে চিকিৎসা নিলে পরবর্তীতে বাচ্চা পাওয়া সম্ভব।
বাচ্চা না হওয়ার জন্য ছেলে বা মেয়ের কেউ দায়ী নয়। আমাদের সমাজে বাচ্চা না হওয়ার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে অপবাদ দেয়া হয় যা কখনই ঠিক নয়। কোনো দম্পত্তির বাচ্চা না হলে তাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শমতো চিকিৎসা নেয়া। বর্তমানে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নয়নের ফলে সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য অনেক উন্নত ও সফল চিকিৎসা রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আলোচনা ও সমোঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই শুধু বাচ্চা না হওয়া তালাকের জন্য কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ হতে পারে না।

যৌন অক্ষমতা

স্ত্রী সহবাসের সময় একজন পুরুষের লিঙ্গ যদি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে শক্ত ও খাড়া না হয় তাহলে তাকে যৌন অক্ষম বা পুরুষত্বহীন বলা হয়। কেউ কেউ জন্মগতভাবে যৌন অক্ষম হতে পারে। যৌন অক্ষমতা দুই রকম হতে পারে- স্থায়ী ও সাময়িক। কেউ কেউ স্থায়ীভাবে যৌন অক্ষম হতে পারে। এছাড়া কোনো কোনো সময় বিভিন্ন মানসিক সমস্যার কারণে সাময়িক যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। যেমন- যৌন বিষয়ে অজ্ঞতা, ভয়, দুর্ভাবনা, হতাশা, কাজের চাপ ইত্যাদি। মাদকাসক্তি এবং ডায়াবেটিসের কারণেও একজন পুরুষ সাময়িকভাবে যৌন অক্ষম হতে পারে। কোনো কোনো সময় মেয়েদের মধ্যেও যৌন অক্ষমতা, যৌনসম্পর্কের প্রতি অনীহা বা কামশীতলতা দেখা যায়। এর কারণও অনেক রকম হতে পারে। দৈহিক কারণ ছাড়া মানসিক কারণেও (যেমন: ভুল-বোঝাবুঝি ও মনের অমিল) এ রকম সমস্যা হতে পারে। পুরুষ বা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা হলে নিরাশ না হয়ে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে হাতুড়ে ডাক্তার, হকার বা কবিরাজের পরামর্শ নেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং এতে বিপদ বাড়তে পারে।
যৌন অক্ষমতা দূর করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কেউ এ সমস্যায় ভোগে তবে তাকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে হাতুড়ে ডাক্তার, হকার বা কবিরাজের পরামর্শ নেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বরং এতে বিপদ বাড়তে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে নতুন বিয়ের পর অতিরিক্ত উত্তেজনা বা নার্ভাস হওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি বীর্যপাত হতে পারে। এ অবস্থায় কিছু দিন চলতে থাকলে স্বামী নিজেকে বা স্ত্রী স্বামীকে যৌন অক্ষম ভাবতে পারে এবং বিবাহিত জীবনে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনের আন্তরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার মাধ্যমে সহজেই এর সমাধান সম্ভব। মেয়েদেরও যৌনবিষয়ক কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন- সহবাস ভীতি, মানসিক বা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে সহবাসের সময় মেয়েরা ব্যথা পেতে পারে এবং এর কারণে বিষয়টি সহজভাবে গ্রহণ করতে নাও পারে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতা ও আন্তরিক ভালোবাসা। তবে সমস্যা চলতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেয়া উচিত। এর ফলে সুস্থ ও স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনযাপন এবং সন্তান লাভ করা যায়।
কারো যদি মনে হয় সে যৌন অক্ষম তবে বিয়ে করার আগে পাশ করা অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে তার খোলাখুলি পরামর্শ করে নেয়া উচিত। কারণ ডাক্তারের পরীক্ষা ছাড়া যৌন অক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ক্যানভাসার বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য যাওয়া উচিত নয়।
খুব কম ক্ষেত্রেই এরকম হয়ে থাকে। যৌনমিলন করতে গিয়ে যদি কোনো পুরুষ অনুমান করে যে, সে যৌন অক্ষম, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সে এ অক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। নিজের ধারণা বা অনুমান সত্যি নাও হতে পারে।

বয়: সন্ধি

অনেক কারণে তোমাদের দুর্বল লাগতে পারে। এর মধ্যে রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগ অন্যতম। পরিমিত পরিমাণে ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেয়া ও ব্যায়াম করার পরেও অসুস্থ বা দুর্বল লাগলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কৈশোরে শরীরের যথাযথ বৃদ্ধি ও সুস্থ খাবারের জন্য পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও শরীরে রোগ প্রতিরোধক শক্তি সঞ্চয় করে। পুষ্টি হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করা থেকে শুরু করে খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয় অর্থাৎ পুষ্টি বলতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলাফলকে বোঝায়।
কারো কারো মুখে এ সময় ব্রণ বা দানা দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ব্রণ আকারে ছোট হয় এবং এমনিতেই চলে যায়। ব্রণে হাত দেয়া উচিত নয়। এ বয়সে ব্রণ হবার মূল কারণ শরীরে হরমোনের পরিবর্তন। তাছাড়া, মানসিক দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অতিরিক্ত চা, কফি ও ধূমপান করার কারণেও ব্রণ হতে পারে। মুখ তেলতেলে থাকলে ব্রণ হয়। প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খেলে, বেশি করে পানি পান করলে এবং মুখমণ্ডল পরিষ্কার রাখলে ব্রণ কম হয়। অল্প পরিমাণ সাবান দিয়ে মাঝে মাঝে মুখ ধুয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলবে। নখ দিয়ে কখনও ব্রণ খুঁটবে না। ব্রণ থেকে বেশি দাগ হয়ে গেলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবে।
কৈশোরকালীন সময়ে শরীর দ্রুত বাড়ে। এই দ্রুত বৃদ্ধি ১০ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। ছেলে-মেয়েদের শারীরিক উচ্চতা ও গঠন কেমন হবে তা নির্ভর করে খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির উপর। তবে, এ বয়সে সবার বৃদ্ধি এক রকম হয় না। তাই দেহের বৃদ্ধির জন্য এ সময় প্রচুর আমিষ ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দেহের চাহিদা অনুযায়ী এ সময়ে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করা হলে শরীরের বৃদ্ধি পুরোপুরি হয়। বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এই বৃদ্ধির গতিতে তারতম্য হতে পারে। যার কারণে সবাই একভাবে বাড়ে না বা লম্বা হয় না। যেমন, কারো বাবা-মা যদি লম্বা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তাদের সন্তানও লম্বা হয়, আবার বাবা-মা কারও উচ্চতা কম হলে সন্তানেরও উচ্চতা কম হতে পারে। এসব কারণে এ বয়সে (১০-১৯ বছর) সবার বৃদ্ধি একরকম হয় না। তবে এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত শারীরিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ অনেক সময় দ্রুত বাড়ে আবার কেউ ধীরে ধীরে বাড়ে। এ বৃদ্ধি কারো কারো ক্ষেত্রে একটু অল্প বয়স হতে শুরু হয় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে দেরিতে শুরু হয়। সেজন্য একই বয়সের একটি ছেলেকে একটি মেয়ের তুলনায় অথবা একটি ছেলেকে আরেকটি ছেলের তুলনায় ছোট কিংবা বড় দেখায়। বয়ঃসন্ধিকালে তোমাদের দেহে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। তোমাদের দেহের এসব পরিবর্তন হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। হরমোন হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা দেহে তৈরি হয়। মনে রেখো, ছেলে-মেয়ে উভয়েরই হরমোন আছে, তবে তাদের হরমোন আলাদা এবং এ কারণে তাদের পরিবর্তনও এক রকম নয়। হরমোনের কারণে এ সময় ছেলেদের মুখে দাড়ি ও গোঁফ গজায় এবং দেহে লোম বেশি হয়। অপরদিকে, মেয়েদের স্তন বৃদ্ধি পায়। ছেলে ও মেয়েদের বগলে ও যৌনাঙ্গে এবং কোনো কোনো ছেলের বুকেও লোম গজায়। ছেলেদের বগল ও যৌনাঙ্গে লোম গজাবার ২/৩ বছর পর দাড়ি ও গোঁফ গজায়। লোম বা দাড়ি-গোঁফ সবার সমান হয় না এবং এর উপর কারো পুরুষত্ব নির্ভর করে না।
যখন একটি মেয়ে ১০-১২ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। এই বয়সে মেয়েদের দেহে হরমোন তৈরি হয়। হরমোনের কারণে মেয়েদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। যেমন- উচ্চতা বাড়ে, মাসিক শুরু হয়, স্তন বড় হয়, বগলে ও যৌনাঙ্গে লোম গজায় ইত্যাদি। এই পরিবর্তনগুলোই হচ্ছে একটি মেয়ের বড় হয়ে ওঠার স্বাভাবিক লক্ষণ।